ঢাকা, ১৮ অক্টোবর, ২০২৪ | কার্তিক ৩ ১৪৩১
ঢাকা, ১৮ অক্টোবর, ২০২৪       
Shruhid Tea

ঢাকার চাওয়া ৭০০ কোটি, বেইজিং দিতে চায় ৫০০ কোটি ডলার

নিজস্ব প্রতিবেদক বঙ্গবাণী

প্রকাশিত: ১২:২৪, ৭ জুলাই ২০২৪

ঢাকার চাওয়া ৭০০ কোটি, বেইজিং দিতে চায় ৫০০ কোটি ডলার

ফাইল ছবি

ঢাকা-বেইজিং কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তী (৫০ বছর পূর্তি) উদযাপনের এক বছর আগে দ্বিপক্ষীয় রাষ্ট্রীয় সফরে সোমবার চীন যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

৫ বছর পর বেইজিং সফরে গিয়ে দুই দেশের ‘অংশীদারত্বকে নতুন উচ্চতায়’ নিতে প্রধানমন্ত্রী চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর সঙ্গে আলোচনা করবেন। এ সময় রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে দুই সরকারের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা বাড়ানোর পাশাপাশি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে চীনের আরো বেশি যুক্ততার মতো বিষয়গুলো অগ্রাধিকার পাবে।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, এই সফরে বাংলাদেশের অগ্রাধিকার থাকবে বাণিজ্য ও অর্থনীতিতে। সে ক্ষেত্রে চীনা মুদ্রায় ঋণ এবং বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের সমন্বিত উন্নয়ন উদ্যোগের মতো বিষয়গুলোতে চীনের অংশীদারত্ব গুরুত্ব পাবে। বেইজিং নিজেদের মুদ্রায় বাংলাদেশকে ৫০০ কোটি ডলার ঋণ দিতে আগ্রহী। যদিও বাংলাদেশ চেয়েছিল ৭০০ কোটি ডলার।

আরো জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর সফরকালে দুই দেশের শীর্ষ রাজনীতিবিদদের আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু বিষয়ের সুরাহা হতে পারে। সফরটি দ্বিপক্ষীয় হলেও সমসাময়িক বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক ঘটনাপ্রবাহের প্রেক্ষাপটে এতে ভূরাজনীতি ও ভূ-অর্থনৈতিক নানা আলোচনা প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠতে পারে।

পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, সফরের নানা বিষয় নিয়ে চীনের সঙ্গে আলোচনা চলছে। এসব আলোচনায় অর্থনৈতিক সহযোগিতার নানা বিষয় প্রাধান্য পাচ্ছে।

২০টি দলিল সইয়ের প্রস্তুতি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীন সফরের তৃতীয় দিন অর্থাৎ বুধবার বেইজিংয়ের গ্রেট হলে চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াংয়ের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করবেন। এরপর দুই নেতার উপস্থিতিতে দুই দেশের মধ্যে বেশকিছু সমঝোতা স্মারকসহ নানা বিষয়ে প্রায় ২০টি দলিল সইয়ের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।

ঢাকার কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, এবারের সফরে দুই দেশের মধ্যে কোনো চুক্তি সই হচ্ছে না। বিভিন্ন বিষয়ে সই হবে মূলত সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) ও সমজাতীয় দলিল। শুক্রবার পর্যন্ত দুই দেশ নতুন ও নবায়ন মিলিয়ে অন্তত ১৫ এমওইউ সইয়ের জন্য চূড়ান্ত করেছে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- অর্থনৈতিক উন্নয়ন নীতিমালা, ডিজিটাল অর্থনীতিতে বিনিয়োগে সহায়তা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা, স্বাস্থ্য খাতে সহযোগিতা, চীন-বাংলাদেশ ষষ্ঠ মৈত্রী সেতুর সংস্কার, চীন-বাংলাদেশ ষষ্ঠ মৈত্রী সেতু নির্মাণ, ব্রহ্মপুত্রে পানিপ্রবাহের আগাম তথ্য সরবরাহ, আওয়ামী লীগ ও চীনের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) মধ্যে সহযোগিতা, দুই দেশের দুটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সহযোগিতা, আম রপ্তানি, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের ক্ষেত্রে সহযোগিতা, পরিবেশবান্ধব জ্বালানি ও কার্বন নিঃসরণ কমানোর ক্ষেত্রে সহযোগিতা, সম্প্রচার কর্তৃপক্ষের মধ্যে সহযোগিতা ইত্যাদি।

বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে এই সফরে যেসব সমঝোতা স্মারক সই নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল তার অন্যতম ছিল প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর উত্থাপিত বৈশ্বিক উন্নয়ন উদ্যোগ (জিডিআই)। এছাড়া চীন সুনীল অর্থনীতিতে সহযোগিতার বিষয়ে একটি এমওইউ সইয়ের প্রস্তাব দিয়েছিল। জানা গেছে, এই সফরে জিডিআই ও সুনীল অর্থনীতিতে সহযোগিতার দুই এমওইউ সই না-ও হতে পারে। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দুই দেশের মধ্যে যেসব এমওইউ ও দলিল চূড়ান্ত করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, তার মধ্যে এ দুটি বিষয় ছিল না।

ঋণের আলোচনা ৫০০ কোটি ডলারে সীমিত
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরের অন্যতম প্রধান দিক হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভে ঘাটতিসহ অর্থনৈতিক সংকট মেটাতে দেশটির ঋণসহায়তা। গত ফেব্রুয়ারিতে চীন ৫০০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ ঋণ বাণিজ্য-সহায়তা (ট্রেড ফ্যাসিলিটি) হিসেবে দেওয়ার প্রস্তাব দেয়। চীনা মুদ্রায় এর পরিমাণ ৩ হাজার ৬০০ কোটি ইউয়ানের বেশি। পরে বাংলাদেশ ঐ প্রস্তাবের পাশাপাশি বাজেট-সহায়তার আওতায় ২০০ কোটি ডলারের ঋণসহায়তার অনুরোধ জানায়। অর্থাৎ সব মিলিয়ে ৭০০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ ৫ হাজার ৪০ কোটি ইউয়ানের বেশি ঋণ নিয়ে গত জুন মাসে বেইজিংয়ে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা হয়।

কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের ঋণসহায়তা এখন ৫০০ কোটি ডলারে সীমিত হয়ে পড়েছে। অর্থাৎ বাজেট-সহায়তার যে ২০০ কোটি ডলার ঋণের বিষয়ে কথা হয়েছিল, তা নিয়ে আর আলোচনা হচ্ছে না। এখন বাংলাদেশকে বাণিজ্য সহায়তার আওতায় শুধু ৫০০ কোটি ডলার দিতে আগ্রহী চীন। তবে ঋণের সুদের হার, গ্রেস পিরিয়ড (ঋণ নেয়া ও পরিশোধ শুরুর মধ্যকার বিরতি) এবং সুদ পরিশোধে সময়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর চূড়ান্ত সুরাহা এখনো হয়নি। কর্মকর্তা পর্যায়ে বিষয়টির সুরাহা না হলে রাজনৈতিক স্তরে এর সিদ্ধান্ত হতে পারে।

পর্যবেক্ষকদের মতে, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশকে যেভাবেই হোক চীন ঋণ দিতে পারে। ফলে এই সিদ্ধান্ত বেইজিংয়ে রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়।

এ প্রসঙ্গে ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রীর বেইজিং সফরের ইঙ্গিত দিয়েছেন সাবেক ও বর্তমান একাধিক কূটনীতিক। সে সময় চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল নির্মাণে ঋণসহায়তার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছিল।

বঙ্গবাণীডটকম/এমএস

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত