ঢাকা, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪ | অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১
ঢাকা, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪       
Shruhid Tea

যে কারণে গলছে সড়কের বিটুমিন, বিকল্প কংক্রিট!

নিজস্ব প্রতিবেদক বঙ্গবাণী

প্রকাশিত: ১৯:২৫, ১৩ মে ২০২৪

যে কারণে গলছে সড়কের বিটুমিন, বিকল্প কংক্রিট!

ছবি-সংগৃহীত

দেশে এবার গত কয়েক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এর মধ্যে যশোরের নাম এসেছে বারবার। আর প্রচণ্ড তাপমাত্রার কারণে এই জেলার বিভিন্ন সড়কের বিটুমিন গলে যায়। এ নিয়ে অনেকেই শঙ্কিত। তাই বিটুমিনের পরিবর্তে বিকল্প পদ্ধতিতে সড়ক নির্মাণের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

অনেকের মনেই প্রশ্ন উঠেছে, কেন গলে যাচ্ছে সড়কের বিটুমিন? সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রকৌশলীরা বলেছেন, মূলত প্রচণ্ড তাপমাত্রার কারণেই সড়কের কিছু কিছু অংশের বিটুমিন গলে যাচ্ছে। আবার কেউ কেউ বলছেন, সড়ক নির্মাণের সময় নিম্নমানের বিটুমিন ব্যবহার করা হয়েছে কি-না, সেটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে। তবে এর সঙ্গে একমত নন সড়ক নির্মাণের সঙ্গে জড়িত ঠিকাদাররা। 

এদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বৈশ্বিক তাপমাত্রার সঙ্গে বাংলাদেশের তাপমাত্রা যেভাবে বাড়ছে, তাতে দেশের সড়ক তৈরিতে নতুন পরিকল্পনা নিতে হবে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, সড়ক তৈরিতে প্রচলিত বিটুমিনের পরিবর্তে পলিমার মডিফাইড বিটুমিন (পিএমবি) ব্যবহার করতে হবে। এছাড়া দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় নতুন সড়ক তৈরির ক্ষেত্রে বিটুমিনের বিকল্প হিসেবে কংক্রিটের সড়ক নির্মাণের দিকে মনোযোগী হতে হবে।

দেশে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতরের আওতায় ২২ হাজার ৪৪৬ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে। সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের ২০২২-২৩ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, এর মধ্যে ৩ হাজার ৯৯১ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়ক, ৪ হাজার ৮৯৭ কিলোমিটার আঞ্চলিক মহাসড়ক এবং ১৩ হাজার ৫৫৮ কিলোমিটার জেলা সড়ক।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ১৫ ও ২০ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গায় জেলা শহরের বিভিন্ন সড়কে রাস্তার পিচ গলে যায়। ঐ দুদিন সেসব এলাকায় ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। এরপর ২৫ এপ্রিল শরীয়তপুর-চাঁদপুর সড়কের ১৫টি স্থানে বিটুমিন গলে যায়। 

যানবাহনের চালকরা জানান, ঐ সড়ক দিয়ে তখন গাড়ি চালাতে গেলে টায়ারের সঙ্গে বিটুমিন লেগে যাচ্ছিল। এছাড়া চুয়াডাঙ্গা-কালীগঞ্জ এবং চুয়াডাঙ্গা-ঝিনাইদহ সড়ক, যশোর-নড়াইল মহাসড়ক ও গাজীপুরের কালিয়াকৈর-ফুলবাড়িয়া আঞ্চলিক সড়কের বিভিন্ন জায়গায় বিটুমিন গলে যাওয়ার খবর পাওয়া যায়।

সওজ সূত্র জানায়, দেশের সড়কে ৬০-৭০ গ্রেডের বিটুমিন ব্যবহার করা হয়। এর গলনাঙ্ক ৪৮ থেকে ৫২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অর্থাৎ ৪৮ ডিগ্রি তাপমাত্রায় এই মানের পিচ গলে যায়। সরকারি প্রতিষ্ঠান ইস্টার্ন রিফাইনারির (ইআরএল) উৎপাদিত পিচের গলনাঙ্ক ৫২ থেকে ৫৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পলিমার মডিফাইড বিটুমিনের (পিএমবি) গলনাঙ্ক ৮০ ডিগ্রির বেশি।

সওজের প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ মইনুল হাসান বলেন, দেশের অল্প কয়েকটি জায়গায় এরকম হয়েছে। এমনও হয়েছে বিটুমিন গলে যাওয়ার খবরে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়েছি, গিয়ে দেখি গলেনি। এরকম বড় কোনো ইস্যু নেই। খুবই অল্প দু-একটা জায়গায় হয়েছে। তবে এটি নিম্নমানের কাজের কারণে হয়েছে কি না তা দেখা হবে। অনেক সময় মেনটেনেন্স বা মেরামতের কাজ করতে গিয়ে টুকটাক দু-এক জায়গায় এমন হতে পারে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক ও অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. হাদিউজ্জামান বলেন, টানা সাতদিন যদি তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত থাকে তাহলে বিটুমিন সহনীয় পর্যায়ে থাকে। সাতদিন পরে বিটুমিনের নিজের ভেতরের তাপমাত্রা ১০ থেকে ১৫ ডিগ্রি পর্যন্ত বেড়ে যায়। তখন বিটুমিন গলতে শুরু করে। 

তিনি বলেন, কংক্রিটের সড়ক তৈরি করলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মন খারাপ হবে। কারণ, সড়ক কংক্রিটের হলে বছর বছর মেরামত করতে হবে না। কয়েক বছর পর পর নতুন করে নির্মাণ করতে হবে না। তাতে তাদের কাজ কমে যাবে। কিন্তু লাভ হবে রাষ্ট্র ও জনগণের।

বঙ্গবাণীডটকম/এমএস

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত