ঢাকা, ২১ নভেম্বর, ২০২৪ | অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১
ঢাকা, ২১ নভেম্বর, ২০২৪       
Shruhid Tea

কিস্তি সুবিধা দিয়ে ঘুষ নিতেন বেনজীর আহমেদ

নিজস্ব প্রতিবেদক বঙ্গবাণী

প্রকাশিত: ২০:৪৬, ১২ জুন ২০২৪

কিস্তি সুবিধা দিয়ে ঘুষ নিতেন বেনজীর আহমেদ

ছবি-সংগৃহীত

কিস্তি সুবিধা দিয়ে ঘুষ আদায় করতেন সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ। সারাদেশের গুরুত্বপূর্ণ জেলা ও থানাগুলোতে ওসি থেকে শুরু করে এসপিদের বদলির জন্য তিনি অর্ধ কোটি থেকে শুরু করে কোটি টাকারও বেশি ঘুষ নিতেন। ঘুষের এই টাকা আদায়ের জন্য বেনজীরের বিশ্বস্ত দুই-তিনজন পুলিশ কর্মকর্তাও ছিলেন। তারাই ঠিক করে দিতেন কোন ওসি কোন থানার দায়িত্ব পাবেন আর কোন এসপি কোন জেলার দায়িত্ব নেবেন। 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, যেসব পুলিশ কর্মকর্তার ওপর বেনজীরের আশীর্বাদ ছিল, তারাই ছিলেন সর্বেসর্বা। এসব পুলিশ কর্মকর্তার ওপর কারো কথা বলার সাহস ছিল না। তাই অনেক পুলিশ কর্মকর্তা মুখ বন্ধ রেখেই তাদের দায়িত্ব পালন করে গেছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে রংপুর জেলা পুলিশ ও রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অন্তত ১৩ জন কর্মকর্তা এমন তথ্য জানিয়েছেন।

তারা বলেন, দেশের ভালো যে কোনো জেলা ও থানায় বদলির জন্য পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাত করতে পারলেই কাজ হয়ে যেত। তাদের পছন্দমতো  থানা-জেলায় বদলি করে দিতেন বেনজীর। এজন্য চাহিদামতো অর্থ নির্দিষ্ট স্থানে নির্দিষ্ট ব্যক্তির কাছে পৌঁছে দিতে হতো। ঘুষবাণিজ্যের বিষয়টি তারা জানলেও কিছু বলা বা করার ক্ষমতা ছিল না।

তারা আরো বলেন, বদলির জন্য চাহিদামাফিক টাকা একসঙ্গে দিতে না পারলে বেনজীর আহমেদ দুই-তিন কিস্তির মাধ্যমে টাকা পরিশোধের শর্ত দিয়ে দিতেন। এই টাকা তার নির্দিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে পৌঁছে দিতে হতো। কিস্তির টাকা নির্দিষ্ট সময় পরিশোধে ব্যর্থ হলে লোক মারফত তাগাদা দিয়ে ও নানাভাবে আদায় করা হতো।

রংপুর জেলা পুলিশ ও রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ঐ কর্মকর্তারা আরো জানান, সরকার অনেক পুলিশ কর্মকর্তাকে তাদের কাজের ওপর ভিত্তি করে পদন্নতি দিলেও বেনজীরকে টাকা না দিলে তারা কর্মস্থলে যোগদান করতে পারতেন না। যারাই ঘুষ দিতে পারতেন কেবল তারাই কর্মস্থলে যোগদান করতেন।

রংপুর বিভাগের ঠাকুরগাঁও ও নীলফামারী জেলায় বেনজীর আহমেদ এবং স্বাস্থ্য বিভাগের আলোচিত ঠিকাদার মিঠুর যৌথ মালিকনায় দুটি পোলট্রি খামার রয়েছে। বেনজীর আহমেদ র‌্যাবের ডিজি থাকার সময় মিঠুকে সঙ্গে নিয়ে হেলিকপ্টারযোগে মাঝেমধ্যে খামার দুটি পরিদর্শনে আসতেন।

রংপুরে জনশ্রুতি রয়েছে, রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেন আলোচিত ঠিকাদার মিঠু। কিন্তু তার বাধা হয়ে দাঁড়ান রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণি কর্মচারী ইউনিয়নের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক আব্রাহাম লিংকন। ফলে ক্ষিপ্ত হয়ে ঠিকাদার মিঠু তৎকালীন র‌্যাবের ডিজি বেনজীর আহমেদকে দিয়ে ‘ক্রস ফায়ারে’র মাধ্যমে আব্রাহাম লিংকনকে হত্যা করেন।

সম্প্রতি রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আলোচিত ঠিকাদার মিঠুর এখনো একটি ছায়া শক্তি সেখানে তৎপর রয়েছে। ঐ শক্তির বিরুদ্ধে তখন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণি কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আব্রাহাম লিংকন বাধা হয়ে দাঁড়ান। এ কারণে তাকে জীবনও দিতে হয়েছে।

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণি কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি শাহিনুর রহমান জানান, লিংকন সবসময় অন্যায়ের বিরুদ্ধে ছিলেন। তিনি সবসময় কর্মচারীদের সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসতেন। হাসপাতালের কর্মচারীরা তার অবদানের কথা সবসময় মনে রাখবেন। হাসপাতালের বেশিরভাগ কর্মচারী মনে করেন- তাকে (আব্রাহাম লিংকন) অন্যায়ভাবে হত্যা করা হয়েছে।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে আব্রাহাম লিংকনের এক নিকটাত্মীয় বলেন, ঠিকাদার মিঠু তখন হাসপাতালে নিম্নমানের সামগ্রী সরবরাহ করত। কোনো নিয়োগ হলেই তার নিজস্ব লোকজনকে অবৈধভাবে নিয়োগের ব্যবস্থা করত। এসব বিষয়ে আব্রাহাম লিংকন বাধা দিত। এ থেকে শুরু হওয়া শত্রুতার কারণে র‌্যাবকে ব্যবহার করে আব্রাহাম লিংকনকে হত্যা করে মিঠু।

বঙ্গবাণীডটকম/এমএস

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত