ঢাকা, ২২ নভেম্বর, ২০২৪ | অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১
ঢাকা, ২২ নভেম্বর, ২০২৪       
Shruhid Tea

পল্লী বিদ্যুতের হরিলুট, ৭০ হাজারের ল্যাপটপ ৫ লাখ

নিজস্ব প্রতিবেদক বঙ্গবাণী

প্রকাশিত: ২৩:৩৪, ১০ জুলাই ২০২৪

পল্লী বিদ্যুতের হরিলুট, ৭০ হাজারের ল্যাপটপ ৫ লাখ

ফাইল ছবি

প্রয়োজনীয় নথি প্রিন্ট করার জন্য যে প্রিন্টারের দাম সর্বোচ্চ ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা সেটিই ১৫ লাখ ৫৯ হাজার টাকা। ৯০ হাজার টাকার ল্যাপটপ ৪ লাখ ৮৬ হাজার টাকায় কিনেছে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)।


একইভাবে রাউটার, কম্পিউটার, স্লিপ প্রিন্টার, এসিসহ বিভিন্ন পণ্য বাজার দরের চেয়ে কেনা হয়েছে অনেক বেশি দামে। অনুসন্ধানে বিদ্যুৎ বিতরণকারী রাষ্ট্রীয় সংস্থাটির এই নজিরবিহীন অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্য উঠে এসেছে।

 

 

‘প্রি-পেমেন্ট ই-মিটারিং ইন ঢাকা ডিভিশন আন্ডার রুরাল ইলেকট্রিফিকেশন প্রোগ্রাম (ফেইজ-১)’ নামে একটি প্রকল্পের আওতায় ১১টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জন্য এসব মালপত্র কিনেছে আরইবি। মধ্যে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ওয়েশন গ্রুপ লিমিটেড (ডব্লিউজিএল) পাঁচটি এবং হেক্সিং ইলেকট্রিক্যাল কোম্পানি লিমিটেড (এইচইএল) ছয়টি সমিতিতে মালপত্র সরবরাহ করেছে। একই প্রকল্পের আওতায় একই কাজের জন্য দুই ধাপে এসব মালপত্র কেনা হলেও প্রতিষ্ঠান দুটির দামের ক্ষেত্রে রয়েছে বিশাল পার্থক্য।

 

 

১১টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মধ্যে ছয়টি সমিতিতে মালপত্র সরবরাহের এর মধ্যে তিনটি সমিতিতে ডব্লিউজিএল ৫০টি এইচপি ব্র্যান্ডের ডেস্কটপ কম্পিউটার (কোর আই ফাইভ) সরবরাহ করেছে। প্রতিটি কম্পিউটারের দাম ৫ লাখ ৭২ হাজার ৮৬২ টাকা হিসাবে মোট ২ কোটি ৮৬ লাখ ৪৩ হাজার টাকা নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। অথচ বাজারে ওই মানের একটি কম্পিউটারের দাম ৬০-৬৫ হাজার টাকা। অন্যদিকে একই প্রকল্পে এইচইএল তিনটি সমিতিতে ৪০টি একই ধরনের কম্পিউটার সরবরাহ করেছে মাত্র ৫৭ হাজার টাকা করে। যার মোট মূল্য ২২ লাখ ৮০ হাজার টাকা।

 

 

বিল পরিশোধের পর গ্রাহককে রসিদ দেওয়ার জন্য বেশ কয়েকটি প্রিন্টার কিনেছে আরইবি। এর মধ্যে ডব্লিউজিএল তিনটি সমিতিতে ৬১টি প্রিন্টার সরবরাহ করেছে প্রায় ১ কোটি ১২ লাখ ৮০ হাজার টাকায়। প্রতিটি প্রিন্টারের দাম পড়েছে ১ লাখ ৮৪ হাজার ৯০৯ টাকা। অথচ বাজারে মানভেদে এ ধরনের প্রিন্টারের দাম ১৫ হাজার থেকে ৩২ হাজার টাকা। তিনটি সমিতিতে ৪০টি প্রিন্টার সরবরাহ করেছে এইচইএল। তাদের প্রতিটি স্লিপ প্রিন্টারের দাম মাত্র ১৬ হাজার ৩৭০ টাকা।

 

 

২৫টি লেজার প্রিন্টার সরবরাহ করেছে ডব্লিউজিএল। প্রতিটির দাম ধরা হয়েছে ১৫ লাখ ৫৯ হাজার টাকা। যার বাজারমূল্য মানভেদে সর্বোচ্চ ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা। অন্যদিকে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা করে ২০টি লেজার প্রিন্টার সরবরাহ করেছে এইচইএল।

 

 

২৫টি নেটওয়ার্ক রাউটার সরবরাহ করে ১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা নিয়েছে ডব্লিউজিএল। প্রতিটি রাউটারের দাম পড়েছে ৫ লাখ ৮০ হাজার টাকা। একই ধরনের ২০টি রাউটার সরবরাহ করেছে এইচইএল। প্রতিটির মূল্য নিয়েছে ৩৫ হাজার ৩৯৫ টাকা। এর বাজারমূল্য মানভেদে ৩০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৬০ হাজার টাকা।

 

 

এইচপি ব্র্যান্ডের একেকটি ল্যাপটপের দাম (কোর আই ফাইভ, ১৫ ইঞ্চি) প্রায় ৪ লাখ ৮৬ হাজার টাকা নিয়েছে ডব্লিউজিএল। অথচ জেনুইন অপারেটিং সিস্টেমসহ এই মানের ল্যাপটপের বাজারমূল্য ৯০-৯৫ হাজার টাকা। আর এইচইএল সরবরাহ করেছে ১ লাখ ১ হাজার ৭৬১ টাকা করে ৩৮টি ল্যাপটপ।

 

 

অন্যদিকে ডব্লিউজিএল দেড় টনের গ্রি ব্র্যান্ডের ২৯টি এসি সরবরাহ করে দাম নিয়েছে ১ লাখ ৭ হাজার টাকা করে। প্রকৃতপক্ষে এর বাজারমূল্য ৬৫-৭০ হাজার টাকা। তবে অন্যান্য ব্র্যান্ডের দেড় টনের এসির দাম এর প্রায় অর্ধেক। এইচইএল ২০টি এসি সরবরাহ করে প্রতিটির দাম নিয়েছে ৩৬ হাজার ৮০০ টাকা।

 

 

এসব মালামাল কেনায় ‘শুভংকরের ফাঁকির’ কৌশল হিসেবে প্রতিটি পণ্যের সঙ্গে প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার সরবরাহের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, কম্পিউটারের সঙ্গে উইনডোজ অপারেটিং সিস্টেমের একটি নিবন্ধনকৃত সফটওয়্যার সরবরাহ করা হয়েছে। কিন্তু যে ব্র্যান্ডের কম্পিউটারটি কেনা হয়েছে তাতে প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান নিবন্ধনকৃত ওই সফটওয়্যার ফ্রি দিয়ে থাকে। একইভাবে স্লিপ প্রিন্টার, রাউটার এবং লেজার প্রিন্টারের সঙ্গে সফটওয়্যার কেনা বাবদ ব্যয় দেখানো হলেও বাস্তবে সেখানে যে সফটওয়্যার ব্যবহার হয়, তাও প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ফ্রি সরবরাহ করে।

 

 

দেশের ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জন্য আরইবি বিভিন্ন সময়ে যেসব মালপত্র কিনে থাকে, সেগুলোর সব তথ্য যাচাই করলে বিপুল পরিমাণ অনিয়ম দুর্নীতির চিত্র উঠে আসবে বলে অভিযোগ করেছেন আরইবির অন্তত তিনজন কর্মকর্তা। যোগাযোগ করা হলে আরইবির চেয়ারম্যান অজয় কুমার চক্রবর্তী বলেন, তিনি একটা জরুরি মিটিংয়ে আছেন। আরইবির সদস্য (বিতরণ ও পরিচালন) দেবাশীষ চক্রবর্তীর সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি।

 

 

 

এ বিষয়ে দেবাশীষ চক্রবর্তী বলেন, ‘আমি অন্য সেকশনের। তাই বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে খোঁজ নিয়ে দেখব।’

 

 

প্রকল্পের পরিচালক ছিলেন আরইবির বর্তমান পরিচালক (কারিগরি) মো. রফিকুল ইসলাম। গতকাল দুপুরে তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দরপত্রের মাধ্যমে মালপত্রগুলো কেনা হয়েছে, যেখানে অনেক বেশি প্রতিযোগিতা হয়েছিল। এখানে কিছু আইটেমের দাম বেশি মনে হলেও কোনো কোনো আইটেমের দাম বাজারদরের চেয়ে অনেক কম। যেমন একটা মিটার স্থাপন করতে ন্যূনতম ৩০০ টাকা দরকার। কিন্তু এখানে ঠিকাদার এই কাজটি মাত্র সাড়ে ৪ থেকে সাড়ে ৫ টাকায় করেছে। যথাযথ নিয়ম মেনে সব আইটেম মিলে সর্বনিম্ন দরদাতাকেই কাজ দেওয়া হয়েছে। এখানে কোনো ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতি হয়নি।’

সূত্র - দৈনিক দেশ রুপান্তর।


বঙ্গবাণীডটকম/এমএস

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত