ঢাকা, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪ | অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১
ঢাকা, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪       
Shruhid Tea

সালথায় প্রধান শিক্ষক বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ

সালথা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি বঙ্গবাণী

প্রকাশিত: ১৭:৫০, ৬ জানুয়ারি ২০২২

সালথায় প্রধান শিক্ষক বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ

স্কুলের মালামাল বিক্রির সময় প্রধান শিক্ষক নাজমা আক্তার। ছবি-সংগৃহীত

নাম নাজমা আক্তার। ফরিদপুরের সালথা উপজেলার সিংহপ্রতাব সরকারি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তিনি। বিদ্যালয় মোট ৯ জন শিক্ষক কর্মরত রয়েছেন। এরমধ্যে নাজমা আক্তার ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানের দায়িত্বে নামমাত্র থাকলেও বিদ্যালয় এসে শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেন না মনের ভুলেও। প্রতিদিন বিদ্যালয় আসেন সকাল ৯টার দিকে’ আবার চলে যান বেলা ১২ টার মধ্যেই। বিদ্যালয় এসেই আগে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেন তিনি। পরে সহকারী শিক্ষকদের ডেকে তার সামনে হাজির করে নানা অজুহাত দেখিয়ে তাদের গালিগালাজ করেন।

শিক্ষা কার্যাক্রমে তার সক্রিয় আগ্রহ না থাকলেও বিদ্যালয়ের উন্নয়নে কখনো সরকারি বরাদ্দ আসলে তা আত্মসাৎ করতে ঠিকই মরিয়া হয়ে উঠেন তিনি। টার্গেট অনুযায়ী বিদ্যালয়ের সরকারি বরাদ্দ আত্মসাৎ করেও আসছেন তিনি। শুধু তাই নয়, বিদ্যালয় একটি জাতীয় অনুষ্ঠানও পালন করেন না। এবার বিজয় দিবসও পালন করেননি। এতসব করার পরেও যেন- দেখার কেউ নেই।

প্রধান শিক্ষক নাজমা আক্তারের এসব কর্মকাণ্ডে বিব্রত ও ক্ষুব্দ অত্র বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদ কমিটি। কমিটির পক্ষ থেকে জেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর নাজমার নানা অনিয়ম আর অদক্ষতার বিষয় একাধিক লিখিত অভিযোগ দিলেও কোনো প্রতিকার পায়নি বলে অভিযোগ করেন তারা। এছাড়া প্রধান শিক্ষকের নানা নির্যাতনের শিকার সহকারী শিক্ষকরা মৌখিকভাবে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে একাধিকবার অবগত করলেও কোনো প্রতিকার পায়নি বলে জানিয়েছেন। পরে তারা লিখিত অভিযোগও দিয়েছে শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর। কিন্তু এতেও কোনো লাভ হয়নি। অজ্ঞাত কারণে উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা এই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই নিচ্ছে না।

বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদ কমিটির সভাপতি মো. আক্কাস মৃধা অভিযোগ করে বলেন, সালথার মধ্যে অষ্টম শ্রেনি পর্যন্ত চালুকৃত মাত্র একটি বিদ্যালয় রয়েছে। তা হলো, আমাদের সিংহপ্রতাব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিগত বছরগুলোতে পিএসসি ও জিএসসি পরিক্ষায় রেজাল্ট এ বিদ্যালয় প্রথম অথবা দ্বিতীয় অবস্থানে থাকলেও দুঃখের বিষয় নাজমা আক্তার প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে আসার পর রেজাল্টের অবস্থা চরম খারাপ। এখন আমাদের বিদ্যালয় উপজেলার মধ্যে কোনো অবস্থানেই নেই। বরং ফেলের হার হতাশাজনক।

তিনি আরো বলেন, ২০১৮-১৯ সালের জেএসসির নম্বরপত্র শিক্ষার্থীদের বিতরণ করা হয়নি এখনও। কি কারণে শিক্ষার্থীদের নম্বরপত্র বিতরণ করতে পারছেন না তাও অজানা। এর কারণ হিসেবে পরে জানতে পারি, প্রধান শিক্ষক হিসেবে তিনি গত সাড়ে তিন বছর ধরে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে অদ্যাবধি একদিনও শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেয়নি। লেখাপড়ার প্রতি তার কোনো আগ্রহ নেই। সহকারী শিক্ষকদের সাথে তার কোনো সু-সম্পর্ক নেই। বিদ্যালয় অর্ধবেলা পর্যন্ত থাকেন। বিদ্যালয়ের প্রতি তার সব সময় অনিহা।

আক্কাস মৃধা বলেন, প্রধান শিক্ষকের নানা অনিয়মের কারণে বিদ্যালয়ের উন্নয়ন হচ্ছে না সঠিকমত। করোনাকালিন সময় তিনি স্কুলে এসে স্কুলের প্রয়োজনীয় বেঞ্চের লোহার কাঠামো, টিন, বই ও গ্রীল বিক্রি করে টাকা আত্মসাৎ করেন তিনি। সেসময় বিষয়টি নিয়ে এলাকায় অনেক সমালোচনা হয়। ২০২১-২২ অর্থবছরে এসএলআইপি ও রুটিন মেরামতের ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদ কমিটির কাউকে না জানিয়ে সে একা সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকার কাজ করে বাকি টাকা আত্মসাৎ করেন তিনি। শুধু এবারই নয়, প্রতি বছরই সরকারি বরাদ্দগুলো লাম-ছাম কাজ করে বাকিটা আত্মসাৎ করে খাচ্ছেন। এমন অবস্থায় অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক বদলি করে একজন দক্ষ কর্মঠ প্রধান শিক্ষক দিয়ে বিদ্যালয়ের অতীত গৌরব পুনরুদ্ধারে সংশ্লিষ্টদের জরুরী পদক্ষেপ নেওয়ার জোর দাবী জানান বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদ কমিটি।

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক গুলশানারা আক্তার, মোস: তাইফুন্নাহার, সাহেবুল ইসলাম ও কাজী খালিদ অভিযোগ করে বলেন, প্রধান শিক্ষকের ব্যবহারে আমরা অতিষ্ট হয়ে যাচ্ছি। স্কুলে এসে একদিনও ক্লাস নেয় না সে। কোনো কারণ ছাড়াই চরম খারাপ আচরণ ও গালিগালাজ করেন আমাদের। তিনি একজন অদক্ষ ও অযোগ্য প্রধান শিক্ষক। তাকে দিয়ে একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চলতে পারে না। তার মত প্রধান শিক্ষকের কারণে আজ আমাদের বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম ধ্বংসের দিকে ধাবিত হচ্ছে।

তারা আরও অভিযোগ করে বলেন, একটি সরকারি প্রোগ্রাম ও জাতীয় অনুষ্ঠানও পালন করেন না তিনি। যা করার আমরা সহকারী শিক্ষকরা ব্যক্তিগত উদ্যোগে করি। বিজয় দিবস উপলক্ষে সরকারি বরাদ্দ থাকা সত্বেও তিনি এবার পালন করেনি। আমরা নিজেদের সাধ্যমত পালন করেছি। প্রধান শিক্ষক শুধু বিদ্যালয়ের সরকারি বরাদ্দ লুটে-পুটে খাচ্ছে। আমাদের পরামর্শও কখনো নেয় না। সরকারি বরাদ্দের একটি উন্নয়নমূলক কাজও তিনি ঠিকমত করেনি।

অভিযুক্ত শিক্ষক নাজমা আক্তার বলেন, যেসব অভিযোগ আমার বিরুদ্ধে দেওয়া হয়েছে, তা সব মিথ্যা। আমার কাছে প্রমাণ আছে, আমি প্রমাণ করতে পারবো।  

ফরিদপুর জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা তৈহিদুল ইসলাম বলেন, সিংহপ্রতাব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে দুটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগ তদন্ত করার জন্য উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তদন্ত শেষে অভিযোগের সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সালথা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নেয়ামত হোসেন বলেন, প্রধান শিক্ষক নাজমা আক্তারের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের একাধিক অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখতে সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। অভিযোগগুলোর সত্যতা পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বঙ্গবাণীডটকম/এমএস/এনআই

সারাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত